বাস্তব সমস্যা সমাধানে সহসমীকরণ

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - গণিত - Mathematics - NCTB BOOK

এই অভিজ্ঞতায় শিখতে পারবে-

  • দুই চলকের একঘাত সমীকরণ
  • এক চলকের দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান
  • লেখচিত্রের সাহায্যে দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান
  • দুই চলকের একঘাত ও এক চলকের দ্বিঘাত সহসমীকরণ সমাধান

বাস্তব সমস্যা সমাধানে সহসমীকরণ

গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বীজগণিতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমীকরণ। তোমরা ইতোমধ্যে পূর্বের শ্রেণিগুলোতে সরল সমীকরণের ধারণা পেয়েছ। এক চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণগুলো সমাধানের কৌশলও তোমাদের জানা। তাছাড়া দৈনন্দিন জীবনে যে নানাবিধ বাস্তবভিত্তিক সমস্যা তোমাকে মোকাবেলা করতে হয় তারও কিছু কিছু সরল সমীকরণ গঠন করে সমাধান করতে পার। তাই না? যে সমীকরণগুলো তোমাকে গঠন করতে হয়, তার সবগুলোই কি এক চলকবিশিষ্ট হয়? নাকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই বা আরও বেশি চলকবিশিষ্ট হতে পারে। এসো আমরা কিছু বাস্তব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি।

দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ গঠন ও সমাধান

নিচের ছক ৫.১ এর সমস্যাগুলোর সমীকরণ গঠন করে সমাধান করার চেষ্টা করো:

 

সেতুর সমস্যার সমাধান

উপরের ছক ৫.১ এর ৩ নম্বর সমস্যাটি সেতু নিজেও সমাধানের জন্য খুব চেষ্টা করছে। তোমাদের মতো সেও প্রথমে একটি ইরেজারের মূল্য x টাকা এবং একটি পেন্সিলের মূল্য টাকা ধরে নেয়। তারপর সমস্যাটি বিশ্লেষণ করে দুই চলকবিশিষ্ট নিচের সমীকরণটি পেল।

2x + y = 18 … … …. (i)

এবার ছক ৫.২ এর মতো একটি ছক তৈরি করে x ও y এর বিভিন্ন মান নিয়ে প্রাপ্ত সমীকরণটির বামপক্ষ ও ডানপক্ষের সত্যতা যাচাই করো।

দেখা যাচ্ছে, x ও y এর অসংখ্য মানের জন্য সমীকরণটির বামপক্ষ ও ডানপক্ষ সত্য হচ্ছে। অর্থাৎ সমীকরণটির অসংখ্য সমাধান আছে। সমাধানগুলো হলো: (1, 16), (2, 14), (3, 12), (4, 10),...। এর অর্থ হলো- একটি ইরেজার ও একটি পেন্সিলের ক্রয়মূল্য অনেকভাবেই হতে পারে। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? সমস্যাটি আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণের জন্য সে ওই দোকান থেকে পুনরায় একটি ইরেজার ও দুটি পেন্সিল ক্রয় করে। এবার দোকানদার তার কাছ থেকে মোট 24 টাকা নেয়। সেতু পূর্বের মতো একটি ইরেজারের মূল্য x টাকা এবংএকটি পেন্সিলের মূল্য টাকা ধরে সমস্যাটি বিশ্লেষণ করে দুই চলকবিশিষ্ট x + 2y = 24......(ii) সমীকরণটি পেলো। তারপর নিচের ছকটি (ছক-৫.৩) তৈরি করে x ও y এর বিভিন্ন মান নিয়ে প্রাপ্ত সমীকরণটির বামপক্ষ ও ডানপক্ষের সত্যতা যাচাই করো।

এক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, x ও y এর অসংখ্য মানের জন্য সমীকরণটির বামপক্ষ ও ডানপক্ষ সত্য হচ্ছে। অর্থাৎ সমীকরণটির অসংখ্য সমাধান আছে এবং সমাধানগুলো হলো: (1, 11.5), (2, 11), (3, 10.5), (4, 10), ... এর মানে, এবারও একটি ইরেজার ও একটি পেন্সিলের ক্রয়মূল্য অনেকগুলো হতে পারে।

সেতু এ ব্যাপারে এবার তার বিষয় শিক্ষকের সাথে পরামর্শ করে। বিষয় শিক্ষক সমীকরণ দুটিকে একত্রে জোট হিসেবে বিবেচনা করে সেতুকে সমাধান করতে বললেন। তিনি বললেন, তুমি তো পূর্বের শ্রেণিতে জেনেছ, এই ধরনের সমীকরণ একেকটি সরলরেখার সমীকরণ এবং ছক কাগজে বিন্দু বসিয়ে এই ধরনের সরলরেখা আঁকা যায়। তাই তুমি চাইলে সমীকরণ দুটিকে দুটি সরলরেখার মাধ্যমে একটি ছক কাগজে উপস্থাপন করে দেখতে পার। হয়তো, সরলরেখা দুটি কোনো একটি বিন্দুতে ছেদ করতে পারে। যদি কোনো একটি বিন্দুতে সরলরেখা দুটি ছেদ করে, তবে জানবে ওই বিন্দুর x ও এর মানই হবে তোমার কাঙ্খিত সমাধান।

বিষয় শিক্ষকের পরামর্শ অনুসারে সেতু প্রথমে ছক-৫.৩ এর মতো করে একটি ছক কাগজে সরলরেখা দুটি অঙ্কন করে। অঙ্কন অনুসারে সরলরেখা দুটি (4, 10) বিন্দুতে পরস্পরকে ছেদ করে। ছেদ বিন্দুতে, x = 4 এবং y = 10। সেতু বুঝতে পারে, একটি ইরেজারের মূল্য 4 টাকা এবং একটি পেন্সিলের মূল্য 10 টাকা।

তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারলে, কোনো বাস্তবভিত্তিক ঘটনা এভাবে দুটি চলক ও দুটি এক ঘাতবিশিষ্ট সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। এধরনের সহসমীকরণকে দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ (Simultaneous linear equations in two variables) বলা হয় এবং ওই সরল সহসমীকরণের ছেদ বিন্দুকে ওই সরল সহসমীকরণের সমাধান (Solution of the simultaneous linear equations) বলে।

 

রাফি ও সোনিয়ার সমস্যা ও সমাধান

সমস্যা: সেতুর বন্ধু রাফি 28 টাকায় 2 প্যাকেট আলপিন ও 3টি কলম এবং সোনিয়া একই দরে ওই দোকান থেকে 56 টাকায় 4 প্যাকেট আলপিন ও 6টি কলম ক্রয় করে। এক্ষেত্রেও রাফি বা সোনিয়া কেউ প্রতি প্যাকেট আলপিন বা প্রতিটি কলমের মূল্য কত তা জানে না। সেতুর মতো আমরা কি পারি না রাফি ও সোনিয়ার সমস্যাটি সমাধান করে দিতে? তাহলে চলো, চেষ্টা করে দেখি:

সমাধান: ধরো, 1 প্যাকেট আলপিনের দাম x টাকা এবং 1 টি কলমের দাম y টাকা।

এবার ছক কাগজে সমীকরণ দুটির লেখচিত্র অঙ্কন করে তাদের ছেদবিন্দু খুঁজে বের করো।

প্রথমে (i) ও (ii) নং সমীকরণ থেকে দুইটি সরলরেখা অঙ্কনের জন্য কয়েকটি করে বিন্দু নির্ণয় করো।

 

দুইটি সরল সহসমীকরণের সমাধান যোগ্যতা (সমঞ্জস/অসমঞ্জস) (Consistency of two simultaneous linear equations)

দুইটি সরল সহসমীকরণের সমাধান একটি হতে পারে, অসংখ্য হতে পারে আবার কোনো সমাধান নাও থাকতে পারে। সুতরাং আমরা যদি আগে থেকেই বের করতে পারি সমাধান আছে কি না তা হলে সুবিধা হয় না? এসো আমরা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সমাধান থাকার শর্তগুলো বের করার চেষ্টা করি।

 

বীজগাণিতিক পর্যবেক্ষণ

 

দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ সমাধানের পদ্ধতি

আমরা প্রধানত জ্যামিতিক ও বীজগাণিতিক এই দুই পদ্ধতিতেই দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ সমাধান করতে পারি। চলো, সমাধানের পদ্ধতিগুলো জেনে নিই।

 

লৈখিক পদ্ধতিতে সমাধান (Solving by Graphical Method)

জ্যামিতিক উপায়ে লেখচিত্র অঙ্কন করে কীভাবে দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ সমাধান করা যায়, এরই মধ্যে তোমাদের সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তোমরা ইতোমধ্যেই দেখেছ, সরল সহসমীকরণের প্রত্যেকটির লেখ একেকটি সরলরেখা। আর সরলরেখাটির প্রত্যেকটি বিন্দুর স্থানাঙ্ক সংশ্লিষ্ট সমীকরণটিকে সিদ্ধ করে। তাই কোনো সরল সমীকরণের লেখ নির্দিষ্ট করতে দুই বা ততোধিক বিন্দুর স্থানাঙ্ক আবশ্যক। চলো নিচের দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ দুইটিকে লৈখিক পদ্ধতিতে সমাধান করে সমীকরণদ্বয়ের সাধারণ সমাধান বের করার চেষ্টা করি।

উদাহরণ: নিচের দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ দুইটিকে লৈখিক পদ্ধতিতে সমাধান করো।

বিন্দুগুলো পাশের গ্রাফ কাগজে বসিয়ে সরলরেখা দুটি আঁকো।

 

 

প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে সমাধান (Solving by Substitution Method)

এই পদ্ধতিতে আমরা নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণকে সমাধান করতে পারি:

ধাপ-১: যে কোনো সমীকরণ থেকে চলক দুটির একটির মান অপরটির মাধ্যমে প্রকাশ করা

ধাপ-২: ধাপ-১ থেকে প্রাপ্ত চলকের মানটি অপর সমীকরণে স্থাপন করে এক চলকবিশিষ্ট সমীকরণ তৈরি ও সমাধান করা।

ধাপ-৩: নির্ণীত সমাধান প্রদত্ত সমীকরণ দুটির যে কোনো একটিতে বসিয়ে অপর চলকের মান নির্ণয় করা

উদাহরণ-২: রাফি বোর্ডে y - 3x + 7 = 0 এবং 2x + y - 3 = 0 সমীকরণ দুটি লিখল।

 

অপনয়ন পদ্ধতিতে সমাধান (Solving by Elimination Method)

অপনয়ন পদ্ধতিতে আমরা নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণকে সমাধান করতে পারি:

ধাপ-১: সুবিধামতো একটি সমীকরণকে বা উভয় সমীকরণকে এরূপ সংখ্যা দিয়ে গুণ করতে হবে যেন গুণনের পর উভয় সমীকরণের যে কোনো একটি চলকের সহগের পরমমান সমান হয়।

ধাপ-২: প্রয়োজনমতো সমীকরণ দুটিকে যোগ বা বিয়োগ করে সহগ সমানকৃত চলকটি অপসারিত করা। তারপর সমাধান করে বিদ্যমান চলকটির মান বের করা

ধাপ-৩: নির্ণীত সমাধান প্রদত্ত সমীকরণ দুটির যে কোনো একটিতে বসিয়ে অপর চলকের মান নির্ণয় করা

গণিত ক্লাসে শিক্ষক বললেন, চলো আজ একটা মজার খেলা খেলি। খেলাটি হলো-একজনের তৈরি গাণিতিক ধাঁধাঁ বা সমস্যার উত্তর অপরজনকে দিতে হবে। শর্ত হলো- ধাঁধাঁ বা সমস্যাটি এমন হবে যা সমাধানের জন্য দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ গঠন করতেই হবে। তারপর সমীকরণজোটের যে কোনো একটি চলক অপসারণ করে সমাধান করতে হবে। শিক্ষকের কথা শুনে, সেতু রাফিকে নিচের সমস্যাটি সমাধান করতে বলল।

রাফি প্রথমে সমস্যাটি ভালোভাবে পড়ে নেয়। তারপর নিচের মতো করে দুটি সমীকরণ গঠন করে:

এইভাবে দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণ জোটের যে কোনো একটি চলক অপনয়ন বা অপসারণ করে অন্য চলকটির মান বের করার পদ্ধতিকে আমরা অপনয়ন পদ্ধতি বলতে পারি।

 

আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান (Solving by Cross Multiplication Method)

আড়গুণন পদ্ধতিতে কীভাবে দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণের সাধারণ সমাধান নির্ণয় করা হয়, সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

আবার, (i) ও (ii) নং সমীকরণজোট থেকে চলক এর মান নির্ণয় করতে চাই। তাই (i) ও (ii) নং সমীকরণের চলক x কে অপনয়ন বা অপসারণ করতে হবে। আর এর জন্য সমীকরণ (i) কে a₂ এবং সমীকরণ (ii) কে a₁ দ্বারা গুণ করি :

x ও y এর এরূপ সম্পর্ক থেকে এদের মান নির্ণয়ের কৌশলকে আড়গুণন পদ্ধতি (Cross Multiplication Method) বা বজ্রগুণন পদ্ধতি বলা হয়।

x ও y এর উপরের সম্পর্ক থেকে আমরা লিখতে পারি,

উপরের সম্পর্কটি পাওয়ার জন্য আমরা নিচের কৌশলটি ব্যবহার করতে পারি।

 

সমস্যা: গাছের চারা রোপণ

প্রতি বছরই সেতুদের স্কুলের সামনের খোলা মাঠে বৃক্ষমেলা বসে। একদিন স্কুল ছুটির পর সেতু ও তার বন্ধু রহিম মেলায় গেল। সেতু তাদের বাড়ির চারপাশের ফাঁকা জায়গায় গাছের চারা রোপণ করার জন্য একজন চারা বিক্রেতার নিকট থেকে 310 টাকা দিয়ে 4টি পেয়ারা গাছের চারা এবং 5টি লেবু গাছের চারা ক্রয় করল এবং রহিম একই দরে 3টি পেয়ারা গাছের চারা এবং 2টি লেবু গাছের চারা ক্রয় করে বিক্রেতাকে মোট 180 টাকা দিলো। একটি পেয়ারা গাছের চারা ও একটি লেবু গাছের চারার দাম কত?

সমাধান: ধরো, 1টি পেয়ারা গাছের চারার দাম x টাকা এবং 1টি লেবু গাছের চারার দাম y টাকা। শর্তানুসারে প্রথমে আমরা সহসমীকরণ গঠন করি:

 

দলগত প্রজেক্ট

শিক্ষক ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীকে 3টি দলে ভাগ করবেন। এবার 3টি কাগজ নিয়ে প্রত্যেক কাগজে 2টি করে সরল সহসমীকরণ লিখবেন। প্রত্যেক কাগজে একই সরল সহসমীকরণ লিখবেন। এবার কাগজ ওটি ভাজ করে কাগজের উপরে একটিতে প্রতিস্থাপন পদ্ধতি, একটিতে অপনয়ন পদ্ধতি এবং একটিতে আড়গুণন পদ্ধতি লিখে প্রত্যেক দলকে লটারির মাধ্যমে একটি করে কাগজ দিবেন। প্রত্যেক দল নিচের কাজগুলো সম্পন্ন করবে।

 

দুই চলকের একঘাত ও দ্বিঘাত সহসমীকরণ

তোমরা ইতোমধ্যে দুইচলকের একঘাত সমীকরণের সাথে পরিচিত হয়েছো। যেমন 2.x - 3y = 6, এই সমীকরণটিতে দুইটি চলক x ও y যাদের প্রত্যেকের ঘাত এক। একারণে এটি দুইচলকের একঘাতবিশিষ্ট একটি সমীকরণ। এখন আমরা এক চলকের দ্বিঘাত সমীকরণের আলোচনা করব।

 

এক চলকের দ্বিঘাত সমীকরণ

চলো একটি মজার কুইজ দিয়ে শুরু করি। নিচের বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল থেকে আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বিয়োগ করলে বিয়োগফল কত হবে তা হিসাব করে লিখো।

এই ক্ষেত্র দুইটির বাহুর দৈর্ঘ্য যদি জানা না থাকত, তাহলে কি আমরা এত সহজেই বিয়োগফল বলে দিতে পারতাম?

সেক্ষেত্রে, আমরা চলকের আশ্রয় নিতাম। মনে করতে পারতাম উভয় ক্ষেত্রের সমান বাহুটির দৈর্ঘ্য x।

তাহলে উপর্যুক্ত সমীকরণটি দাঁড়াত,

x² - 7x = - 10

তোমরা কি বলতে পার, এটি কোন ধরনের সমীকরণ? সমীকরণটিতে কেবল একটি চলক x ব্যবহৃত হয়েছে। তাই চলকের ভিত্তিতে এটি একটি একচলকবিশিষ্ট সমীকরণ। আবার সমীকরণটিতে চলক x এর সর্বোচ্চ ঘাত 2। একারণে, ঘাতের ভিত্তিতে এটি একটি দ্বিঘাত সমীকরণ। সুতরাং, দুইটি বৈশিষ্ট্যকে একত্রে করে বলা হয়, এটি একটি এক চলকবিশিষ্ট দ্বিঘাত সমীকরণ।

 

এক চলকের দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান পদ্ধতি

দ্বিঘাত সমীকরণকে সমাধান করতে হলে সমীকরণের সকল পদ গাণিতিক নিয়মানুযায়ী '=' চিহ্নের বামদিকে এনে ডানদিকে 0 বসাতে হবে। বামদিকে আমরা একটি এক চলকবিশিষ্ট দ্বিঘাত বহুপদী রাশি পাব। এই দ্বিঘাত বহুপদী রাশিকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করতে হবে (উৎপাদকে বিশ্লেষণ করার পদ্ধতি বহুপদী রাশির অভিজ্ঞতায় আলোচনা করা হয়েছে)। পরে প্রত্যেকটি উৎপাদকের মান ) ধরে চলকের মান বের করতে হবে।

 

মধ্যপদ বিস্তৃতির মাধ্যমে সমাধান

এক চলকবিশিষ্ট দ্বিঘাত বহুপদী রাশি

ax2 + bx + c

এর মধ্যপদ বিস্তৃতি বলতে বোঝায়, ৮ কে দুইটি সংখ্যা d এবং e এর মাধ্যমে এমনভাবে বিভক্ত করো যেন, d+e = b এবং de = ac হয়।

উদাহরণ: x2 - 7x = 10 সমীকরণটি সমাধান করো।

সমাধান: x2 - 7x = 10 সমীকরণটিকে লিখতে পারি,

x2 -7x + 10 = 0

এবার বামপক্ষকে মধ্যপদ বিস্তৃতি করে পাই,

আমরা খুব সহজেই x2 - 7x + 10 = 0 সমীকরণটির উৎপাদকে বিশ্লেষণ করে ফেলেছি। কিন্তু সমীকরণটিতে যদি x2 - 7x 10 = 0 হতো, তাহলে কি এত সহজেই মধ্যপদ বিস্তৃতি করে সমাধান করা যেত? না, এত সহজেই সমাধান করা যেত না (চেষ্টা করে দেখো)। সকল দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান করার একটি বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। চলো আমরা দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান করার সেই পদ্ধতিটি শিখে ফেলি।

 

সাধারণ পদ্ধতিতে সমাধান

 

জোড়ায় কাজ

নিচে কয়েকটি সমীকরণ দেওয়া হলো। সমীকরণগুলোর মূলের প্রকৃতি নির্ণয় করে নিচের তালিকাটি পূরণ করো।

আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, মধ্যপদ বিস্তৃতির মাধ্যমে x2 - 7x - 10 = 0 সমীকরণটির সমাধান করা সহজ নয়। চলো এখন সাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করে এই সমীকরণটি সমাধান করি।

সমস্যা: x2 - 7x - 10 = 0 সমীকরণটির সমাধান করো।

 

একক কাজ

তোমার শেখা পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে নিচের সমীকরণগুলো সমাধান করো। মূলগুলো খালি ঘরে লেখো।

 

লেখচিত্রের সাহায্যে দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান

গ্রাফ কাগজে ক্ষুদ্রতম বর্গের প্রতিবাহুর দৈর্ঘ্যকে উভয় অক্ষে একক ধরে উপরের বিন্দুগুলো স্থাপন করে লেখচিত্রটি অঙ্কন করি।

 

একটি বাস্তব সমস্যা ও সমাধান

সমস্যা: সেতুর চাচা হাসান সাহেব একজন ব্যবসায়ী। তিনি একটি পাইকারি দোকান থেকে 50000 টাকা দিয়ে কয়েক প্যাকেট কলম কিনলেন। অন্য একটি দোকানে প্রতি প্যাকেট কলম 2টাকা করে কম পাওয়ায় আগের সমান টাকার কলম কিনলেন এবং তিনি 25 প্যাকেট কলম বেশি পেলেন। হাসান সাহেব প্রথমে কত প্যাকেট কলম কিনেছিলেন এবং প্রতি প্যাকেট কলমের দাম কত ছিল? প্রতি প্যাকেট কলম কত টাকায় বিক্রি করলে তাঁর মোটের উপর 12000 টাকা লাভ হবে?

সমাধান: তোমরা কি সমস্যাটিকে সমীকরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারবে? এসো আমি একটু সাহায্য করি। ধরো, হাসান সাহেব প্রথমে x প্যাকেট কলম কিনেছিলেন। এবার নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখো।

 

দুই চলকের একঘাত ও দ্বিঘাত সহসমীকরণ সমাধান

বাস্তবে অনেক সমস্যা আছে যাকে দুই চলকের একঘাত এবং দ্বিঘাত সহসমীকরণে রূপান্তর করে সমাধান করা সহজ হয়। গাণিতিক সমস্যাকে কীভাবে সমাধান করা হয় প্রথমে তার একটি উদাহরণ দেওয়া হলো।

উদাহরণ: নিচের দুই চলকের একঘাত ও দ্বিঘাত একজোড়া সহসমীকরণের সমাধান করো।

 

লেখচিত্রের মাধ্যমে সমাধান

 

দলগত প্রজেক্ট: চাহিদা মোতাবেক সরবরাহের পরিমাণ নির্ণয়

কোনো একটি কারখানাকে লাভজনক করে তুলতে হলে ভোক্তার চাহিদার সমান পন্য উৎপন্ন করতে হয়। এই অবস্থাকে বাজার সাম্যতা (market equilibrium) বলে। কোনো একটি কারখানার উৎপাদিত পন্যের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহের সমীকরণ নিচে দেওয়া হলো।

 

কাজের নির্দেশনা:

 

জোড়ায় কাজ

শ্রেণি শিক্ষকের নির্দেশ মোতাবেক কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে নিচের সমীকরণজোট বীজগাণিতিক পদ্ধতিতে সমাধান করো। অতপর লেখচিত্রের মাধ্যমে সমীকরণজোট সমাধান করে প্রমাণ করো যে, উভয়ভাবে প্রাপ্ত সমাধান একই। তোমার দলের কার্যক্রম পোষ্টারে লিখে ক্লাসে উপস্থাপন করো।

Content added || updated By
Promotion